আমেরিকা—একটি স্বাধীন রাষ্ট্র না ইসরায়েলের পদতলে নতজানু পরাশক্তি?
কলামিস্ট: আব্দুল্লাহ আল মামুন

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় কৌতুক হলো এই যে, যারা অন্য দেশের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ বিচারক সেজে ঘুরে বেড়ায়, তারাই নিজের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বর্বরতা, গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে নীরব থাকে—যদি সেই বর্বরতার পিছনে থাকে তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা।

এই কৌতুকের প্রধান চরিত্র আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আর মঞ্চপট? ইসরায়েল।

ইসরায়েল নামের রাষ্ট্রটি যেন মার্কিন প্রশাসনের ওপর আরোপিত কোনো 'ধর্মীয় শত্রুতা ও শ্রেষ্ঠত্ববাদী' গোষ্ঠীর ইচ্ছার বাস্তব রূপ।
বিশ্ববাসী যখন গাজার ধ্বংসস্তূপে মৃত শিশুদের মুখে রক্তের ছাপ দেখে আঁতকে উঠছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে 'ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার' নিয়ে প্রতিধ্বনি করছেন বার বার।
কোনোদিন কি একবারও বলেছেন—"ফিলিস্তিনেরও বাঁচার অধিকার আছে"?

আমেরিকা আজ আর মানবতার পক্ষে নয়, বরং একটি বিশেষ শ্রেণির দালালি করা রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ‘খাশোগি হত্যাকাণ্ডে’ হুঁশিয়ারি দেয় যে দেশ, সেই দেশই যখন গাজায় একের পর এক গণহত্যার ভিডিও, শিশু হত্যার সরাসরি ফুটেজ দেখতে পায়—তখন নিশ্চুপ, নির্বিকার। কেন? কারণ খুনির নাম ইসরায়েল। আর খুনিকে পেছনে থেকে অস্ত্র, ডলার আর ভেটো দিয়ে আগলে রাখে আমেরিকাই।

মার্কিন কংগ্রেস—ইসরায়েলি প্রভাবের বন্দি?
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংসদ—মার্কিন কংগ্রেস। কিন্তু ইসরায়েলি লবিস্টদের সামনে তাদের অবস্থা যেন পুতুলের মতো।
AIPAC, JINSA, ZOA—এমন লবিং গ্রুপগুলোর প্রভাবে কংগ্রেসে ইসরায়েলবিরোধী কোনো ন্যায্য প্রস্তাব টিকতেই পারে না।
একজন কংগ্রেসম্যান যদি একবার বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে”—তাকে সন্ত্রাসবাদী-সমর্থক, ইহুদি-বিদ্বেষী ট্যাগ দিয়ে চুপ করানো হয়।

এটাই কী স্বাধীন মত প্রকাশ?

যুদ্ধ অর্থনীতি: যেখানে শিশুদের লাশও শুধু পরিসংখ্যান
আমেরিকা একদিকে বলে—"মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে" আর অন্যদিকে বছরে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পাঠায় সেই ইসরায়েলের হাতে, যে রাষ্ট্র দিনের পর দিন ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়, আর শিশুদের রক্তে মাটি রাঙায়।

এই সহায়তা আসলে "সহায়তা" না—বরং এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ অর্থনীতির খেলা।

জাতিসংঘে ভেটোর অপব্যবহার
১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে। কিন্তু আমেরিকা আজ এই সংস্থাকে নিজের রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছে।
যখনই কোনো দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ন্যায্য দাবি তোলে—আমেরিকা সেখানে ভেটো দিয়ে ইসরায়েলকে রক্ষা করে।
গণহত্যা চলতে থাকুক—তাতে কিছু যায় আসে না, ইসরায়েল যেন নিরাপদ থাকে, এটিই আমেরিকার আসল নীতি।

ফিলিস্তিনি শিশুদের কান্না কি আমেরিকার কানে পৌঁছায় না?
প্রতিটি শিশু হত্যার দৃশ্য আমেরিকার প্রশাসন দেখে—জানে—কিন্তু চুপ থাকে।
তাদের নৈতিকতা তখন ঘুমিয়ে যায়।
তাদের নীতিনৈতিকতা তখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বন্দি হয়ে পড়ে।
তাদের বিবেক তখন তেল, গ্যাস, এবং লবিং ডলারের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়।

আমেরিকার ভণ্ডামি আজ আর লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
বিশ্ববাসী বুঝে গেছে—এই রাষ্ট্র ‘গণতন্ত্রের পূজারী’ নয়, বরং ক্ষমতার পূজারী।
এবং ইসরায়েল সেই ক্ষমতার অন্যতম গোপন শিরোমণি।

এখন প্রশ্ন হলো—আমেরিকা কি সত্যিই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র?
নাকি একটি বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর হাতে ‘আধুনিক জিম্মি রাষ্ট্র’?

মানবতা আজ রক্তাক্ত।
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা আজ মানবাধিকারের নামে যে ছদ্মবেশ পরে ঘুরে বেড়ায়—তার মুখোশ খুলে গেছে।

আমরা এই মুখোশচ্যুত, নৈতিকতা-হীন রাষ্ট্রের নোংরা ইতিহাস লিখে রাখব—তাদের নীরবতা, তাদের পক্ষপাতিত্ব, তাদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে।
আমেরিকা—একটি স্বাধীন রাষ্ট্র না ইসরায়েলের পদতলে নতজানু পরাশক্তি? কলামিস্ট: আব্দুল্লাহ আল মামুন বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় কৌতুক হলো এই যে, যারা অন্য দেশের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ বিচারক সেজে ঘুরে বেড়ায়, তারাই নিজের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বর্বরতা, গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে নীরব থাকে—যদি সেই বর্বরতার পিছনে থাকে তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। এই কৌতুকের প্রধান চরিত্র আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর মঞ্চপট? ইসরায়েল। ইসরায়েল নামের রাষ্ট্রটি যেন মার্কিন প্রশাসনের ওপর আরোপিত কোনো 'ধর্মীয় শত্রুতা ও শ্রেষ্ঠত্ববাদী' গোষ্ঠীর ইচ্ছার বাস্তব রূপ। বিশ্ববাসী যখন গাজার ধ্বংসস্তূপে মৃত শিশুদের মুখে রক্তের ছাপ দেখে আঁতকে উঠছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে 'ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার' নিয়ে প্রতিধ্বনি করছেন বার বার। কোনোদিন কি একবারও বলেছেন—"ফিলিস্তিনেরও বাঁচার অধিকার আছে"? আমেরিকা আজ আর মানবতার পক্ষে নয়, বরং একটি বিশেষ শ্রেণির দালালি করা রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ‘খাশোগি হত্যাকাণ্ডে’ হুঁশিয়ারি দেয় যে দেশ, সেই দেশই যখন গাজায় একের পর এক গণহত্যার ভিডিও, শিশু হত্যার সরাসরি ফুটেজ দেখতে পায়—তখন নিশ্চুপ, নির্বিকার। কেন? কারণ খুনির নাম ইসরায়েল। আর খুনিকে পেছনে থেকে অস্ত্র, ডলার আর ভেটো দিয়ে আগলে রাখে আমেরিকাই। মার্কিন কংগ্রেস—ইসরায়েলি প্রভাবের বন্দি? বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংসদ—মার্কিন কংগ্রেস। কিন্তু ইসরায়েলি লবিস্টদের সামনে তাদের অবস্থা যেন পুতুলের মতো। AIPAC, JINSA, ZOA—এমন লবিং গ্রুপগুলোর প্রভাবে কংগ্রেসে ইসরায়েলবিরোধী কোনো ন্যায্য প্রস্তাব টিকতেই পারে না। একজন কংগ্রেসম্যান যদি একবার বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে”—তাকে সন্ত্রাসবাদী-সমর্থক, ইহুদি-বিদ্বেষী ট্যাগ দিয়ে চুপ করানো হয়। এটাই কী স্বাধীন মত প্রকাশ? যুদ্ধ অর্থনীতি: যেখানে শিশুদের লাশও শুধু পরিসংখ্যান আমেরিকা একদিকে বলে—"মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে" আর অন্যদিকে বছরে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পাঠায় সেই ইসরায়েলের হাতে, যে রাষ্ট্র দিনের পর দিন ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়, আর শিশুদের রক্তে মাটি রাঙায়। এই সহায়তা আসলে "সহায়তা" না—বরং এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ অর্থনীতির খেলা। জাতিসংঘে ভেটোর অপব্যবহার ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে। কিন্তু আমেরিকা আজ এই সংস্থাকে নিজের রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছে। যখনই কোনো দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ন্যায্য দাবি তোলে—আমেরিকা সেখানে ভেটো দিয়ে ইসরায়েলকে রক্ষা করে। গণহত্যা চলতে থাকুক—তাতে কিছু যায় আসে না, ইসরায়েল যেন নিরাপদ থাকে, এটিই আমেরিকার আসল নীতি। ফিলিস্তিনি শিশুদের কান্না কি আমেরিকার কানে পৌঁছায় না? প্রতিটি শিশু হত্যার দৃশ্য আমেরিকার প্রশাসন দেখে—জানে—কিন্তু চুপ থাকে। তাদের নৈতিকতা তখন ঘুমিয়ে যায়। তাদের নীতিনৈতিকতা তখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বন্দি হয়ে পড়ে। তাদের বিবেক তখন তেল, গ্যাস, এবং লবিং ডলারের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়। আমেরিকার ভণ্ডামি আজ আর লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিশ্ববাসী বুঝে গেছে—এই রাষ্ট্র ‘গণতন্ত্রের পূজারী’ নয়, বরং ক্ষমতার পূজারী। এবং ইসরায়েল সেই ক্ষমতার অন্যতম গোপন শিরোমণি। এখন প্রশ্ন হলো—আমেরিকা কি সত্যিই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র? নাকি একটি বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর হাতে ‘আধুনিক জিম্মি রাষ্ট্র’? মানবতা আজ রক্তাক্ত। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা আজ মানবাধিকারের নামে যে ছদ্মবেশ পরে ঘুরে বেড়ায়—তার মুখোশ খুলে গেছে। আমরা এই মুখোশচ্যুত, নৈতিকতা-হীন রাষ্ট্রের নোংরা ইতিহাস লিখে রাখব—তাদের নীরবতা, তাদের পক্ষপাতিত্ব, তাদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে।
0 Comments 0 Shares 189 Views 0 Reviews
Eidok App https://eidok.com